Report Now

দুর্যোগকালীন সময়ে নারী ও কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য

প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী ও চর রাজিবপুর (০৫টি) উপজেলায় দুর্যোগকালীন সময়ে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা, দুর্যোগে মোবাইল অ্যাপস, পোষ্টার, লিফলেট, ফ্লায়ার্স, অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জেলা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের জেন্ডার সংবেদনশীল রিপোর্টিং কার্যক্রম শক্তিশালীকরনে প্রশিক্ষণ প্রদান যাতে করে দুর্যোগকালীন সময়ে মিডিয়া এবং সিএসও একসাথে অনুকুল পরিবেশে অবাধে প্রতিবেদন করতে পারে। প্রকল্প কার্যক্রম স্থায়ীকরনের লক্ষ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক তৈরী এবং তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা। স্থানীয় পর্যায়ের (ইউনিয়ন, উপজেলা) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যকর ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী

যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন সব চাইতে বেশি। প্রাকৃতিক যে কোন দূর্যোগ যেমনঃ তাপ প্রবাহ, বন্যা, ক্ষরা, নদী ভাঙ্গন এসব দুর্যোগে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু, চাষের জমি বা গৃহপালিত পশুর ক্ষতি, সামাজিক সহায়তার অভাব, স্থানচ্যুতি, খাদ্য সংকট, আর্থিক সহায়তার অভাব, পরিবারের পুরুষদের বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় শারীরিক আঘাত, শারীরিক অক্ষমতা সব মিলিয়ে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানসিক অবস্থার বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী, শিশু-কিশোর এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী।

মানসিক স্বাস্থ্য কি?

মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে মনের স্বাস্থ্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে নিজের সক্ষমতা বুঝতে পারা, দৈনন্দিন চাপের সাথে মানিয়ে চলা, নিজের কাজগুলো ঠিকমত করতে পারা এবং সমাজে কোন না কোনভাবে অবদান রাখা।

  • মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হলে মানসিক রোগ বা সমস্যা হতে পারে। মানসিক সমস্যা হলে একজন ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ ও আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়

বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, ঢাকা ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করে এবং এই জরিপ অনুযায়ী ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব মানুষের মধ্যে ১৮.৭% ভাগ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে এই হার ১১% ভাগ। এবং ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু কিশোরদের মধ্যে এই হার ১২.৬%। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বব্যাপি ২০% শিশু ও কিশোর কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছে। সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী।

দুর্যোগ চলাকালীন অবস্থায় নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা যে ধরণের ঝুঁকির মধ্যে থাকে-

  • যে কোন দুর্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা চরমভাবে বেড়ে যায়। দুর্যোগে সব কিছু হারিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নারী এবং কিশোরীরা বেঁচে থাকার জন্য কিংবা নিরাপত্তাহীনতার কারণে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, যার ফলে অনেক সময় যৌণ হয়রানীর স্বীকার হয় যা নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • দুর্যোগকালীন সময় খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে, খাদ্য সংকট হলে সহিংসতা বেড়ে যায় যার প্রথম শিকার নারী ও শিশুরা।
  • শিশু-কিশোররা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে।
  • নারী, শিশু-কিশোর এবং প্রতিবন্ধীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
  • নারী, শিশু-কিশোর এবং প্রতিবন্ধীরা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সেবা এবং সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
  • নারী, শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীরা বিপদজ্জনক পরিবেশে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
  • আর্থিক কষ্ট ও অনিশ্চয়তার কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যেতে পারে। এই ক্ষতিগুলোর পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেগুলো হতে পারে

  • নিজের ক্ষতি ও আত্মহত্যা করার প্রবণতা
  • অতিরিক্ত উদ্বেগ
  • বিষণ্ণতা
  • অত্যধিক রাগ এবং সহিংস আচরণ করা
  • ক্ষুধামন্দা এবং ইটিং ডিসঅর্ডার
  • উশৃঙ্খল ও আক্রমণাত্বক আচরণ করা
  • অপরাধ প্রবণতা ও বুলিং
  • স্কুল ড্রপ আউট
  • এটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD)
  • পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)
  • অপমানজনক আচরণ করা ও অন্যকে অবহেলা / উপেক্ষা করা
  • মিথ্যা বলার প্রবণতা

দুর্যোগে মহিলাদের যে সব মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়-

  • বিষণ্ণতা, অতি উদ্বেগ, অতিরিক্ত চাপ, ঘুমের সমস্যা, হতাশা,
  • আত্মহত্যার চিন্তা, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এবং সহিংসতা।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন
  • নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য জাতীয় হেলপ লাইন সেন্টার-১০৯
  • নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক বিভাগ।
  • ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে নিকটস্থ কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।
  • আইনগত সহায়তার তথ্য পেতে জাতীয় হেল্প লাইন নম্বর-১৬৪৩০
Translate »